জিম্মিদের মুক্তি না দিলে পানি, খাদ্য ও বিদ্যুৎ পাবে না গাজা: ইসরায়েল

admin

হামাসের জিম্মি করা ইসরায়েলিদের মুক্তি না দিলে গাজায় পানি, খাদ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ করা হবে না বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের জ্বালানিমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘জিম্মি হওয়া ইসরায়েলিরা দেশে ফিরে না আসার আগ পর্যন্ত গাজায় কোনো বৈদ্যুতিক সুইচ চালু করা হবে না, কোনো পানির পাম্প চলবে না এবং কোনো জ্বালানির ট্রাক প্রবেশ করবে না। মানবতা মানবতাবাদীদের জন্য। কেউ আমাদের নৈতিকতা শেখাবেন না।’

গত শনিবার হামলা চালানোর পর হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলি নাগরিকসহ প্রায় দেড় শ জনকে জিম্মি করেছে। এর মধ্যে ৯৩ জনকে শনাক্ত করতে পেরেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

তাদের পরিবারকে এরই মধ্যে জানানো হয়েছে। এদিকে হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় চার জিম্মি নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার হামাসের প্রকাশিত এক ভিডিওতে শিশুসহ এক নারীকে মুক্তি দিতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল।

এর আগে হামাস হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে ইসরায়েল যদি কোনো সতর্কতা ছাড়াই গাজার বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্যবস্তু বানায়, তবে তারা জিম্মিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা শুরু করবে। যদিও চলমান ইসরায়েলি হামলার মুখে এমন কিছু হামাসকে করতে দেখা যায়নি।

এদিকে হামাসের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের মধ্যেই ইসরায়েলে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তেলআবিবের প্রতি সংহতি জানাতেই তার এ সফর। শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) দেখা করবেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গেও।

তেলআবিবের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন তাকে স্বাগত জানান। পরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন তিনি। বৈঠকে নেতানিয়াহু ব্লিঙ্কেনকে বলেছেন, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মতোই হামাসকেও ধ্বংস করতে হবে। এ সময় ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির কথা পুনরায় ব্যক্ত করেছেন নেতানিয়াহুর কাছে। বৃহস্পতিবারেই তার আম্মানের উদ্দেশে তেলআবিব ছাড়ার কথা রয়েছে। সেখানে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাতের কথা রয়েছে।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ আব্বাসের সঙ্গে ব্লিঙ্কেনের আসন্ন বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোনো ধারণা দেয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্লিঙ্কেন হামাসের হামলার ইস্যুতে নিন্দা জানানোর জন্য আব্বাসকে চাপ প্রয়োগ করবেন। যদিও এ ধরনের ঘোষণা আব্বাসকে কঠিন অবস্থায় ফেলবে। তা সত্ত্বেও ব্লিঙ্কেন হামাসের সঙ্গে তার পার্থক্য তুলে ধরার গুরুত্বের বিষয়ে তিনি ফিলিস্তিনি এই নেতাকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবিসি প্রতিবেদক বারবারা প্লেট উশার এ সফর শুরুর আগে বলেছিলেন, কোনো ধরনের সংঘাত অবসানের লক্ষ্যে ব্লিঙ্কেন (মধ্যপ্রাচ্যে) সেখানে যাচ্ছেন না। এমনকি তিনি যুদ্ধবিরতির কোনো আহ্বান জানাননি। ব্লিঙ্কেনের বার্তা স্পষ্ট। আজ, আগামীকাল ও প্রতিদিন ইসরায়েলের পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।

বারবারা আরও জানিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন চান ইসরায়েল যেন আইন মেনে চলে এবং বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এড়িয়ে চলে। তবে তারা অবশ্যই হামাসের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী ও দীর্ঘ আক্রমণ প্রত্যাশা করেন এবং এর সমর্থনও করেন। এদিকে হামাস ও ইসরায়েল ইস্যুতে বিরল ফোনালাপ হয়েছে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও সৌদি আরবের কার্যত শাসক যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বলছে, এই দুই নেতা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ অবসানের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলাপ করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফিলিস্তিনি রাজনীতি গভীরভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরের নিয়ন্ত্রণ ফাতাহর হাতে এবং গাজার নিয়ন্ত্রণ হামাসের হাতে। চলমান এই যুদ্ধও চলছে গাজাকে কেন্দ্র করে।

যদিও ইসরায়েলের মাটিতে হামাসের হামলার কোনো সমালোচনা করেনি ফাতাহ। উল্টো মাহমুদ আব্বাস এ পরিস্থিতির জন্য ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছেন। এমনকি তিনি চলমান ইস্যুতে মস্কো সফরের পরিকল্পনা করছেন বলে জানিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক গণমাধ্যম।শনিবার হামাসের হামলার পর ইসরায়েলি বাহিনীকে সহায়তার অংশ হিসেবে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।

হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামাস যোদ্ধাদের দ্বারা শিরশ্ছেদ করা ইসরায়েলি শিশুর ছবি দেখেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজায় চলমান ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১ হাজার ৩৫০ ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন তিন হাজার জনের বেশি ফিলিস্তিনি। জাতিসংঘ বলছে, গাজায় বাস্তুচ্যুতের সংখ্যা বেড়ে চার লাখ ছাড়িয়েছে। পশ্চিম তীরেও ২৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদিকে যুক্তরাজ্যে ইহুদিদের সাহায্যকারী দাতব্য সংস্থা দ্য কমিউনিটি সিকিউরিটি ট্রাস্ট বলছে, ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর যুক্তরাজ্যে ইহুদিবিদ্বেষী ঘটনা তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে ইহুদি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।

যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী টম তুগেনধাত জানিয়েছেন, তিনি বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন। এদিকে ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিহতদের মধ্যে নিজেদের ২১ জন নাগরিক রয়েছে বলে জানিয়েছে থাইল্যান্ড। যেসব থাই নাগরিক ইসরায়েল ত্যাগে ইচ্ছুক, তাদের সরিয়ে নিতে কাজ শুরু করেছে ব্যাংকক। এরই মধ্যে ১৫ জন থাইল্যান্ডে পৌঁছেছেন। কাজের সুবাদে ইসরায়েলে ৩০ হাজারেরও বেশি থাই নাগরিকের বসবাস।

এই প্রবন্ধটি শেয়ার করুন
2টি মন্তব্য