ধর্ম

ইসলামে টুপি পরার বিধান

ধর্ম ডেস্ক

টুপি ইসলামি আদি সভ্যতার অনুষঙ্গ। মুসলিম উম্মাহর শিআর বা নিদর্শন। মুসলমানদের জাতীয় পোশাকের মধ্যে অন্যতম। হাদিস ও আসারে এর অসংখ্য প্রমাণ বিদ্যমান। শরিয়তের বিধান অনুযায়ী, শুধুমাত্র ঘুমানোর সময় ছাড়া সর্বাবস্থায় টুপি পড়া সুন্নত, মোস্তাহাব। এটি শুধু নামাজের সঙ্গে নির্দিষ্ট নয়, বরং রাসুল (স.) এবং সাহাবায়ে কেরাম (রা.) সবসময় পাগড়ি-টুপি পরিধান করতেন। (কিতাবুন নাওয়াজেল: ১৫/৩৪৬)হাসান বিন মেহরান থেকে বর্ণিত, এক সাহাবি বলেছেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গে তাঁর দস্তরখানে খেয়েছি এবং তাঁর মাথায় সাদা টুপি দেখেছি।’ (আল ইসাবাহ: ৪/৩৩৯) উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) সফর অবস্থায় কানবিশিষ্ট টুপি পরতেন আর আবাসে শামী টুপি পরতেন। (আখলাকুন নুবুওয়্যাহ, আল জামে লি আখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে, পৃ-২০২) উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছেন- শহিদ হলো তিন শ্রেণীর লোক: এমন মুমিন…এবং রাসুলুল্লাহ (স.) মাথা তুললেন। তখন তাঁর টুপি পড়ে গেল। অথবা বলেছেন, উমরের টুপি পড়ে গেল। (মুসনাদে আহমদ: ১৪৬ জামে তিরমিজি: ১৬৪৪)আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর তিন প্রকার টুপি ছিল। সাদা তুলার আস্তরণবিশিষ্ট টুপি, ডোরাদার ইয়ামানি চাদর দ্বারা নির্মিত টুপি এবং কান ঢাকা যায় এমন টুপি। এটি তিনি সফরকালে পরতেন এবং কখনো কখনো নামাজ আদায়ের সময় সেটি সামনে রেখে দিতেন। (আখলাকুন নবী: ২/২১১-৩১৫)সাহাবায়ে কেরাম, তাবেইন, তাবে-তাবেইন এবং পরবর্তী সময়ে যুগে যুগে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ব্যাপকভাবে টুপি পরার ধারাবাহিকতা চলে আসছে। হজরত হাসান বসরি (রহ.) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, লোকেরা গরমের দিনে নামাজে পাগড়ি বা টুপির ওপর সেজদা করতেন।’ (সহিহ বুখারি: ১/৮৬) ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, হাদিসে উল্লিখিত ‘লোকেরা’ শব্দ দ্বারা সাহাবায়ে কিরাম উদ্দেশ্য। (ফাতহুল বারী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫৮৮)অন্য হাদিসে এসেছে, ‘আনাস বিন মালিক (রা.) সাদা টুপি দিয়ে তার মাথা ঢেকে রাখতেন।’ (সহিহ বুখারি: ৫৮০২)হজরত জুহাইর (রহ.) বলেন, আমি প্রখ্যাত তাবেয়ি আবু ইসহাক আসসাবিয়িকে দেখেছি, তিনি আমাদের নিয়ে নামাজ পড়ছেন। তিনি মাটি থেকে টুপি উঠিয়ে মাথায় পরছেন।’ (তাবাকাতে ইবনে সাদ: ৬/৩১৪) ইমাম মালেক (রহ.) সম্পর্কেও অনুরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়। (আলজামে, খতিব বাগদাদি: ১/৩৮৮)আলেমগণ একমত যে, টুপি পরা মোস্তাহাব এবং চার ইমামের সকলেই বলেন যে, নামাজ আদায়ের সময় টুপি পরিধান করা মোস্তাহাব আর অবহেলা করে টুপি পরিধান না করে নামাজ পড়া মাকরুহ, যদিও নামাজ আদায় হয়ে যাবে।’ (ফতোয়ায়ে কাজিখান: ১/১৩৫; রদ্দুল মুখতার: ১/৬৪০; ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া:১/৫৬৫)‘পাগড়ির মতো টুপিও মুসলিম জাতীয় পোশাকের একটি উৎকৃষ্ট পোশাক। হাদিস ও আসারে এর অসংখ্য প্রমাণ বিদ্যমান।’ (যাদুল মাআদ: ১/১৩৫)অতএব, প্রমাণিত হলো- ইসলামে সুন্দর পোষাকের অংশ টুপি। নামাজে সুন্দর পোষাকের পূর্ণতার জন্য টুপি পরা মোস্তাহাব আমল। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নামাজের সময় তোমাদের সর্বোৎকৃষ্ট পোশাক পরিধান করো।’ (সুরা আরাফ: ৩১)তাফসিরে রুহুল মাআনিতে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, হজরত হাসান ইবনে আলী (রা.) নামাজের সময় সর্বোৎকৃষ্ট পোশাক পরিধান করতেন, একদিন কেউ তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সুন্দর। তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। তাই আমি আমার প্রভুর জন্য সুন্দর পোশাক পরিধান করি। (রুহুল মাআনি: ৪/৩৪৯)আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে টুপির গুরুত্ব উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন। নবীজির সকল সুন্নতকে আঁকড়ে ধরার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button