জাতীয়

প্রত্যাবাসন শুরুর আশা সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে

নিউজ ডেস্ক

কক্সবাজারের উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সেখানে জড়ো হতে থাকেন নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা। অল্প সময়ের মধ্যে হাজার তিনেক মানুষের জমায়েত হয় সেখানে। মুহুর্মুহু স্লোগানে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। কেউ স্লোগান ধরে, কেউ হাত উঁচিয়ে তুলে ধরে প্লাকার্ড-ফেস্টুন। সেখানে ইংরেজিতে লেখা ছিল ‘হোপ ইজ হোম’। মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাদের নির্মম নির্যাতনের মুখে বসতভিটা ছেড়ে আসার পঞ্চমবার্ষিকী গতকাল এভাবেই পালন করেছে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা। সমাবেশে বক্তাদের মূল দাবি ছিল স্বদেশে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন। সেই সঙ্গে রাখাইনে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। আরও ছিল সেনাদের নির্যাতনে নিহত স্বজনদের আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা। ২০১৭ সালের দুঃসহ স্মৃতি মনে পড়ে যাওয়ায় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন গতকাল। রোহিঙ্গা নেতা নুরুল আমিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘দ্রুত দেশে ফিরতে চাই, মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলকে নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে হবে।’ মাস্টার ইউসুফ নামের আরেক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ‘আর রিফউজি হয়ে থাকতে চাই না। নির্যাতন-নিপীড়নের বিচার বিশ্ববাসীকে করতে হবে।’ মোনাজাত শেষে মোহাম্মদ সলিম (৬৭) নামের এক রোহিঙ্গা বৃদ্ধ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার দুই ছেলেকে হত্যা করেছে মিয়ানমারের মিলিটারিরা। পাঁচ বছর হলো এখানে পালিয়ে এসেছি। এখনো সেই স্মৃতি ভুলতে পারিনি। আল্লাহ তাদের বিচার একদিন করবে।’ ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশমুখী সর্বশেষ ঢলের স্মরণে কক্সবাজারের পাশাপাশি গতকাল ঢাকাতেও ছিল কিছু আয়োজন। সচিবালয়ে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত নোয়েলিন হেইজার। এই বৈঠকের পর প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হতে পারে।প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিবছর হাজার হাজার নতুন শিশু জন্ম নিচ্ছে, এতে প্রতিবছরই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মিয়ানমার যেহেতু এ সমস্যা সৃষ্টি করেছে, তাই তাদেরই এ সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।’  জাতিসংঘের বিশেষ দূত জানান, বাংলাদেশে আসার আগে তিনি মিয়ানমার ভ্রমণ করেন এবং নিজ নাগরিকদের ফেরত নেওয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকেরা যেন মর্যাদাপূর্ণ এবং নিরাপদে নাগরিক অধিকারসহ তাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে পারে, সেই লক্ষ্যে জাতিসংঘ ও আসিয়ান কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, মিয়ানমারের নাগরিকেরা যেন যথাযথ যাচাইকরণের মাধ্যমে তাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে পারে, সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এদিকে যুক্তরাজ্য সরকার গতকাল মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে অস্ত্র ও অন্যান্য ব্যবসার সম্পর্ক আছে এমন কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। ২০১৭ সালে আসা কয়েক লাখ মানুষসহ বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্যাম্পে ১১-১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। পাঁচ বছরে একজন রোহিঙ্গাও স্বদেশে ফেরত যেতে পারেনি। এতে হতাশা, বেকারত্ব ও ক্ষোভ থেকে রোহিঙ্গারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলা পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান রোহিঙ্গাদের কারণে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, বেশির ভাগ ঘটনাই মাদকসংক্রান্ত। জেলা পুলিশের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। রোহিঙ্গা শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ক্যাম্পে সিক্স মার্ডারের পর থেকে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় রাতে পাহারা দিচ্ছে। এতে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার বেড়েছে। পাহারার ব্যবস্থার কারণে অপরাধ কমে আসছে বলে মনে করেন তিনি।

ব্রয়লার মুরগি আর শিমের দাম এক !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button