

মোবাইল ফোনে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তির পরিচয় দিয়ে অর্থকড়ি হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। এরইমধ্যে অনেকে এই প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে হয়েছেন সর্বস্বান্ত। এবার এই চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে প্রায় ৩২ হাজার টাকা খোয়ালেন মেহের আফরোজ শাওন। তথ্যটি জানিয়েছেন অর্গানাইড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হক। তিনি জানান, এক প্রতারক নিজেকে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া পরিচয় দিয়ে শাওনকে ফোন করেন। তাকে জানান, অস্ট্রেলিয়া থেকে নুহাশপল্লীর উন্নয়নবাবদ বড় অংকের একটি ফান্ড এসেছে। বর্তমানে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা রয়েছে উল্লেখ করে ওই প্রতারক শাওনকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন উপ-সচিবের মোবাইল নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। শাওন ওই নাম্বারে যোগাযোগ করলে ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে উপ-সচিব পরিচয় দেন। এরপর তিনি ফান্ড ট্রান্সফারের জন্য সরকারি ফি বাবদ ৩১ হাজার ৮৫০ টাকা দিতে বলেন। উপ-সচিব নামধারীর কথামতো টাকা দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে শাওন নাম্বারটি বন্ধ পান। এসময় প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে নুহাশপল্লীর ম্যানেজার বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটির তদন্তভার পড়ে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওপর। বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. রবিউল ইসলাম (৪১) নামের ওই প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন ও ভুয়া রেজিস্ট্রেশন করা চারটি সিমকার্ড জব্দ করে ডিবি। অভিযানটি পরিচালিত হয় ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদের নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ফজলুর রহমানের তত্ত্বাবধানে। এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন অর্গানাইড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার জুয়েল রানা। এ প্রসঙ্গে নাজমুল হক বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে প্রতারক রবিউল ইসলাম বিভিন্ন কৌশলে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করেন। পরে ওই নাম্বারে কল করে নিজেকে বাংলাদেশ সরকারের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও সংসদ সদস্যদের পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে কল করে বিদেশি অনুদান এসেছে বলে জানান। এরপর অনুদান পেতে হলে সরকারি ভ্যাট ট্যাক্স ও প্রসেসিং ফি বাবদ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দিতে হবে বলে জানান। ফির টাকা মোবাইল ব্যাংকিং নগদ/বিকাশের মাধ্যমে নিয়ে পরবর্তী সময়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতেন প্রতারক রবিউল। দীর্ঘদিন ধরে এসব উপায়ে সহজ-সরল মানুষের সরলতাকে পুঁজি করে প্রতারণা করে আসছিলেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতারক রবিউল ইসলামের নামে আরও বেশ কয়েকটি মামলা চলমান। এ পর্যন্ত তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। আরও মামলা আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ সবশেষে নাজমুল হক জানান, আসামির সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কি না তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। রবিউলকে তিনদিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হয়েছে।