বরিশালসারাদেশ

শুঁটকি উৎপাদন শুরু হয়েছে তালতলীতে। 

মো.মাহমুদুল হাসান, তালতলী(বরগুনা)

বরগুনার তালতলীতে বিভিন্ন চরে শুরু হয়েছে শুঁটকি উৎপাদনের কাজ। শীতের আমেজ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলের মতো এ উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার নারী পুরুষ শুঁটকি তৈরির জন্য ছোট ছোট ঘর বানাচ্ছে। জেলে পল্লীগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে শুঁটকি ব্যবসায়ী, মালিক ও শ্রমিকের আনাগোনা। দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি থাকায় হিমসিম খাচ্ছেন শুটকিপল্লীর ব্যবসায়ীরা।

উপজেলার আশারচর, সোনাকাটা, জয়ালভাঙ্গা, নিশানবাড়িয়ার চরের, শুঁটকি পল্লীতে প্রতি বছরের নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ৫ মাস ধরে চলে শুঁটকি তৈরিকরণের কাজ। এই সময় এক ধরনের আমেজ বিরাজ করে শুঁটকি পল্লীর ক্রেতা, বিক্রেতা ও শ্রমিকদের মাঝে। প্রতিটি শুঁটকি পল্লী হতে প্রতি সপ্তাহে ১০০ থেকে ১৫০ মণ মাছ রপ্তানি হয়। নদী থেকে কাঁচা মাছ শুঁটকি পল্লীতে নিয়ে আসার পর নারী শ্রমিকেরা তা পরিষ্কারের কাজ সম্পন্ন করে। এরপর মাছগুলো পরিস্কার পানিতে ধুয়ে বানায় (মাচা) শুকানো হয়। তিন-চার দিন ধরে রোদে মাছগুলো শুকিয়ে শক্ত করা হয়। এসময় প্রস্তুত থাকে ক্রেতা পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তারা এই পল্লীগুলো থেকে শুঁটকি মাছ রপ্তানি করে চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, খুলনা ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এখানকার শুঁটকিতে কোনো প্রকার কীটনাশক বা অতিরিক্ত লবণ দেওয়া হয়না বলে এই এলাকার শুঁটকির চাহিদা সবসময়ই একটু বেশিই। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী প্রতি কেজি ছুরি মাছের শুঁটকি ৭শ থেকে ৮শ টাকা, রূপচান্দা মাছের শুঁটকি ১ হাজার থেকে দেড় হাজার, মাইট্যা ৮০০ থেকে এক হাজার, লইট্যা ৬শ থেকে ৭শ, চিংড়ি ৭শ থেকে ৯শ টাকা এবং অন্যান্য মাছের শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫৫০ টাকায় ।

রবিবার (৬ নভেম্বর)উপজেলার আশারচর শুঁটকি পল্লীতে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ৬ শতাধিক জেলে ও মালিক পক্ষ শুঁটকি উৎপাদন করার লক্ষে ছোট ছোট ৩২টি ঘর তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ কেউ ঘর উঠিয়ে শুঁটকি তৈরির জন্য মাছ রোদে শুকাচ্ছে। একের পর এক মাছ ধরা ট্রলার সমুদ্র থেকে আসছে। প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয় এখানে। এর মধ্যে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্টা, পোপা অন্যতম। এছাড়াও চিংড়ি, ছুড়ি, ভোল, মেদসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাহিদাও লক্ষ্য করা যায়। যে সব জেলেদের ঘর উঠানো হয়েছে তারা মাছ গুলো বাঁশের মাচায় ও মাদুরে করে রোদে শুকানোর কাজ শুরু করেছে।

এদিকে বর্ষার কারনে কয়েকমাস ছাড়া বছরের বাকি সময়ে সবচেয়ে বেশি শুঁটকি তৈরি হয় শীতে। আর এ শুঁটকি পল্লীতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে হাজার হাজার শ্রমিক। এছাড়াও এখানকার শুঁটকি মাছের গুড়া সারাদেশে পোল্ট্রি ফার্ম ও ফিস ফিডের জন্য সরবরাহ করা হয়। এদিকে দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতিসহ ডিজেলের দাম বেশি থাকায় চিন্তায় পড়ছে এখানকার ব্যবসায়ীদের মাঝে। কিন্তু এ ব্যবসায় বেশি লাভ থাকলেও এ বছর হয়তো বেশি লাভের মুখ দেখা হবে না বলে জানান সংশ্লিষ্ট জেলেরা।

স্থানীয় একাধিক জেলে ও ব্যবসায়ী বলেন, প্রধান সড়ক থেকে শুটকি পল্লী পর্যন্ত যোগাযোগের  এক কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খুবই বেহাল। এই রাস্তাটা দিলে আমরা শুটকি  ট্রাকে লোড দিতে পারবো। এতে আমাদের খরচের পরিমাণ কম হবে। এছাড়াও টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। টিউবওয়েল ও টয়লেট নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। আমরা প্রতিবছর এখান থেকে অনেক টাকা রাজস্ব দেই সরকারকে
শুঁটকি ব্যবসায়ী মোঃ রুপচাঁন হাওলাদার জানান, শুঁটকি তৈরির করার আগেই এখান থেকে সরকারিভাবে এসব শুঁটকি বিদেশে রফতানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। কারণ দেশ থেকে সরকারিভাবে শুঁটকি রফতানির কোনো ব্যবস্থা নাই। সরকার এ বিষয়ে দৃষ্টি দিলে আমরা অনেক লাভবান হতে পারতাম। তিনি আরও বলেন, ছোট বেলা থেকেই এই ব্যবসার সাথে জড়িত হওয়ার জন্য অন্য পেশায় যাইতে পারে না । তাই নিত্য প্রয়োজনীয় সকল কিছুর দাম বেশি থাকায় এ বছর ব্যবসা কেমন হবে এ নিয়ে চিন্তায় আছি।
আরেক শুঁটকি ব্যবসায়ী সেকান্দার হাওলাদার বলেন, আমি বাবার সাথে ছোট সময় থেকেই আজ ৩২ বছর যাবত এই শুঁটকি ব্যবসা করছি। এই বছর বাজারে সকল জিনিসপত্রের দাম বেশি থাকায় শুটকি ব্যবসা পূজি বেশি খাটাতে হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এই বছর ৫ লাখ টাকা বেশি পূজি লাগছে। সবকিছু ভালো থাকলে হয়ত কিছু ব্যবসা হতে পারে। তিনি আরও বলেন, প্রধান সড়ক থেকে শুটকি পল্লীতে আসতে রাস্তাটা খুবই খারাপ।ট্রাক ঠিকমতো মাল বহন করতে পারে না।  রাস্তাটা যদি সরকারি ভাবে করা হয় তাহলে এখান থেকে ট্রাক লোড দেওয়া যাবে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল আলম বলেন, সরকারিভাবে শুঁটকি রফতানির জন্য মৎস্য অধিদফতরে সুপারিশ পাঠানো হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম সাদিক তানভীর বলেন, এডিপি বা অন্য কোন প্রকল্প থেকে রাস্তাটি দেওয়ার জন্য চেষ্টা করা হবে। এছাড়া বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েল ও টয়লেটের জন্য সার্বিক চেষ্টা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button